রাখাইনের অস্থিরতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে ব্যাপকহারে প্রভাব পড়েছে। রাখাইনের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মি দখলে নেয়ার পর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী জাহাজ নাফ নদীতে আটকে তল্লাশি চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ধস নেমেছে আমাদানি-রফতানিতে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, রাখাইনের অস্থিরতায় মিয়ানমার থেকে ঠিকমতো পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। আগে রাখাইনের মংডু ও আকিয়াব শহরের বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা যেতো। কিন্তু রাখাইনের সীমান্তসহ এক-তৃতীয়াংশ শহর ও গ্রাম আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পরে মংডু ও আকিয়াব শহর থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন ইয়াঙ্গুন শহর থেকে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। তাও সময় মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। সর্বশেষে গত দেড় মাস পর ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের আসার পথে গত ১৬ জানুয়ারি সীমান্তে নাফ নদীতে তল্লাশির নামে আটকে রাখে আরাকান আর্মি। এর চারদিন পর ৩টি জাহাজ ছেড়ে দেয়া হলেও এখনো ১টি পণ্যবাহী জাহাজ তারা ছাড়েনি।
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহদুর বলেন, আরাকান আর্মি কী চাচ্ছে তা স্পষ্ট না। রাখাইন সীমান্তের নাফ নদীতে তল্লাশির নামে জাহাজ আটকানো হচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের নিয়মানুযায়ী পণ্য আমদানি-রফতানি করে গেলেও রাখাইনের অস্থিরতায় সীমান্ত বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এপারের ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মিয়ানমারে রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে, বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটার একটা সমাধান দরকার।
এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দরের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরের আমাদানি-রফতানিতে ধস নেমেছে। রাখাইনে সংঘাত শুরু হলে মংডু ও আকিয়াব থেকে এপারের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারেননি। পরে তারা ইয়াঙ্গুন শহর থেকে পণ্য আমদানি ও টেকনাফ থেকে মালামাল রফতানি করতেন। এরইমধ্যে রাখাইনের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে গেলে তখন আমাদানি-রফতানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এক বছর আগেও কোটি কোটি টাকার মালামালে ভরপুর ছিল বন্দর। এখন বন্দরের শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে মাসে কোটি কোটি টাকা জমা হতো। এখন এক-তৃতীয়াংশ রাজস্ব আদায় থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আরাকান আর্মির হাতে এখনো পণ্যবাহী একটি জাহাজ আটকানো রয়েছে।
